দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে একটা চক্র পূরণের খুব কাছাকাছি এখন বাংলাদেশ। অপেক্ষা শুধু অস্ট্রেলিয়াকে আরেকবার হারানোর। তাহলেই সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে ওয়ানডেতে একাধিক জয়ের স্বাদ পাওয়া হয়ে যাবে বাংলাদেশের।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম জয় ১৯৯৮ সালে হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে। টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলকে প্রথম টাইগাররা হারায় ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে। পরবর্তী ১৬ বছর সেই পাকিস্তান বাংলাদেশের জন্য হয়ে ছিল মানসিক বাধার এক প্রাচীর। পাকিস্তানের পাশাপাশি ছিল দারুণ পেশাদার দুই দল দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। এই তিন দলকে আরেকবার হারাতেই পারছিল না বাংলাদেশ।
সাফল্যগর্ভা ২০১৫ সাল একে একে ঘুচিয়ে দিচ্ছে সেই অপূর্ণতা। বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ পেল বাংলাদেশ। মানসিক বাধার দেয়াল গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সহসাই সেই জয়ের সঙ্গে যোগ হলো আরও দুটি জয়। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড পাকিস্তান!
দক্ষিণ আফ্রিকাকেও বাংলাদেশ প্রথমবার হারিয়েছিল বিশ্বমঞ্চে- ২০০৭ বিশ্বকাপের সুপার এইটে। দক্ষিণ আফ্রিকা তখন র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল। গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে ওঠা বাংলাদেশের সাফল্যকে যখন বলা হচ্ছিলো ‘ফ্লুক’, প্রোটিয়াদের হারিয়ে আরেকবার ক্রিকেটবিশ্ব কাঁপিয়ে দেয় বাংলাদেশ।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়টা একরকম ‘ফ্লুক’ হয়েই ছিল। আরেকটি জয় ধরাই দিচ্ছিল না। অবশেষে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্যের স্রোতে ভেসে গেল প্রোটিয়ারাও। আগামী বুধবার সিরিজ জিতে গেলেও অবাক হওয়ার থাকবে না কিছুই।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রথম একাধিক জয়ের স্বাদ পায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০০৪ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়েকে ৮ রানে হারানোর পরের বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশ আবার তাদের হারায় নিজেদের মাটিতে। বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল সেবার। প্রথম ২ ওয়ানডে হারা বাংলাদেশ ৫ ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল শেষ তিনটি জিতে।
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয়বার শিকার হওয়া দ্বিতীয় দেশ ভারত। নিজেদের শততম ওয়ানডেতে ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আবার হারায় ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অফ স্পেনে।
উপমহাদেশের আরেক দল শ্রীলংঙ্কাকে ২০০৬ সালে বগুড়ায় হারানোর পর বাংলাদেশ আবার হারায় ২০০৯ সালে মিরপুরে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ও দ্বিতীয়বার হারানো টানা দুই ম্যাচে, ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় মূল ক্রিকেটারদের ছাড়া মাঠে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সেবার হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ।
একই অভিজ্ঞতা নিউ জিল্যান্ডের ক্ষেত্রেও। ২০১০ সাল দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে প্রথম ও দ্বিতীয় জয়। জয় ধরা দিল পরের দুই ম্যাচেও। হোয়াইটওয়াশড হলো এবার কিউইরা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি জয়ও ধরা দিয়েছে কাছাকাছি সময়ে। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে ব্রিস্টলে প্রথম জয়, পরের বছর বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় জয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের জোড়া পূরণ করতে সময় লাগলো ৮ বছর। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে অপেক্ষাটা ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। ২০০৫ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে কার্ডিফ মহাকাব্যই এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একমাত্র জয়। সহসা অপেক্ষার অবসানও হচ্ছে না। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাংলাদেশে সিরিজ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, তবে সফরে কোনো ওয়ানডে নেই। শুধু দুটি টেস্ট।
তবে যেভাবে বদলে গেছে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়াকে আরেকবার হারানোর অপেক্ষাও হয়ত সময়েরই ব্যাপার। অপেক্ষা শুধু দেখা হওয়ার!
টেস্টখেলুড়ে দলগুলির বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ :
প্রতিপক্ষ
|
ম্যাচ
|
জয়
|
হার
|
ফল হয়নি
|
জয়ের হার
|
জিম্বাবুয়ে
|
৬৪
|
৩৬
|
২৮
|
০
|
৫৬.২৬
|
নিউ জিল্যান্ড
|
২৫
|
৮
|
১৭
|
০
|
৩২.০০%
|
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
|
২৮
|
৭
|
১৯
|
২
|
২৬.৯২%
|
ইংল্যান্ড
|
১৬
|
৩
|
১৩
|
০
|
১৮.৭৫%
|
ভারত
|
৩২
|
৫
|
২৬
|
১
|
১৬.১২%
|
দক্ষিন আফ্রিকা
|
১৬
|
২
|
১৪
|
০
|
১২.৫০%
|
পাকিস্তান
|
৩৫
|
৪
|
৩১
|
০
|
১১.৪২%
|
শ্রীলঙ্কা
|
৩৮
|
৪
|
৩৩
|
১
|
১০.৮১%
|
অস্ট্রেলিয়া
|
১৯
|
১
|
১৮
|
০
|
৫.২৬%
|
ConversionConversion EmoticonEmoticon