BDNow24 News

বাবা বল করতেন, ব্যাট করতেন ইমরুল

ইমরুল কায়েস। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার। আজ তার ব্যাট হাসলে গোটা বাংলাদেশ হাসে, তিনি ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাও মুষড়ে পড়েন। ২২ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরি ও ৩ হাফসেঞ্চুরি এবং ৫৬ ওয়ানডেতে ১ সেঞ্চুরি ও ১০ হাফসেঞ্চুরির মালিক ইমরুল কায়েসের টাইগার দলের নির্ভরযোগ্য ওপেনিং ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে নিরলস অধ্যবসায় ও প্রিয় বাবার পরিশ্রমের গল্প।

ঈদে মেহেরপুরের অজপাড়া গাঁ উজুলপুরে ইমরুল কায়েসের বাড়িতে সেইসব গল্প শুনতে হাজির হয় বাংলানিউজ। সেইসব সার্থক গল্পের ঝাঁপি খ‍ুলে বাংলানিউজকে শোনান ইমরুলের বাবা বানী আমিন বিশ্বাস ও চাচা জাকির হোসেন।
ইমরুল স্বজনদের কাছে সাগর নামে পরিচিত। বিশেষত পরিবারের লোকজন এবং মা-বাবা তাকে সাগর নামেই ডাকেন। উজুলপুরের ইমরুল এখন বাংলাদেশেরও স্বপ্নের ‘সাগর’।

স্বপ্নের ‘সাগর’কে নিয়ে গল্পের শুরুটা করেন বাবা বানী আমিন; ‘ছোট বেলায় ইমরুল গুটি (মার্বেল) খেলতো, দৌঁড় খেলায়ও দারুণ ছিল, সব খেলায়ই ভালো ছিল সে। কিন্তু আমি ক্রিকেট খুব পছন্দ করতাম। তাই একদিন স্থানীয় এক মিস্ত্রিকে দিয়ে একটি কাঠের ব্যাট তৈরি করি। ওই ব্যাট দিয়ে তাকে খেলতে দিই। একদিন আমিই বল করতে শুরু করি, ওকে দিয়ে ব্যাট করাই, ও উপভোগ করতে থাকে।’
 
ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় দৌঁড় প্রতিযোগিতায় খুলনা বিভাগে তৃতীয় স্থান দখল করলেও বাবা বানী আমিন সেদিকে দিতে চাননি ইমরুলকে। বলছিলেন, ‘আমার ইচ্ছে ছিল, সাগর শুধু ক্রিকেট খেলবে। ক্রিকেট খেলা ছাড়া আমার অন্য কোনো খেলা ভালো লাগতো না, লাগে না।’
 
বাবা বিশ্বাস করতেন বহুমুখী প্রতিভার ইমরুল ক্রিকেটেও নাম করবে। তবে সেজন্য তাকে মেহেরপুরের অজপাড়া গাঁয়ের মায়া ছাড়াতে হবে। তাই অসুস্থ শরীরেই একদিন সাগরকে রাজশাহী নিয়ে যান বাবা, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সাদ একাডেমিতে ভর্তি করানোর জন্য, যেন সেখানে থেকে ক্রিকেটটা ভালো মতো রপ্ত করতে পারে। 
ভর্তির পর সাদ একাডেমির শিক্ষার্থী ইমরুল অধ্যয়ন আর অধ্যবসায়ে মনোযোগী হন। ছেলে ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ করছে কিনা সেটা দেখতে মাঝেসাঝেই তাকে না বলে মাঠে চলে যেতেন বানী আমিন। প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গিয়ে আবডালে সাগরের প্রশিক্ষণ দেখতেন।
 
বানী আমিন স্মরণ করেন, ‘আমি দেখতাম, শান্ত ছেলেটা আমার কোনো দিনই প্রশিক্ষণে ফাঁকি দিতো না। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও সে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতো।’
 
ইমরুলকে পেছনে থেকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ যুগিয়েছেন বাবা-ই; ‘আমি সব সময় সাগরকে বলতাম, ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়ালেখা করবে। ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। ছোটবেলায় থেকে সাগরকে সবাই হায়ার (ভাড়া) করে ক্রিকেট খেলতে নিয়ে যেতো। আমার নির্দেশনা ছিল, কারোর সঙ্গে যেন টাকা না নেওয়া হয়। তাহলে ক্রিকেটের থেকে টাকার প্রতি বেশি লোভ হবে।’
 
সাগরের এগিয়ে যাওয়ার গল্পগুলো বানী আমিন বলছিলেন; ‘আমার ছেলে ২০০৪ সালে নড়াইলে খেলতে গিয়ে হাফ সেঞ্চুরি করেছিল। সেই খেলা দেখে মাশরাফির বাবাও অনেক খুশি হয়েছিলেন।’ 
 
বানী আমিনের কথাগুলো এতোক্ষণ শুনছিলেন তার ভাই জাকির হোসেন। এবার তিনি কথা বলেন, বলেন আশার কথা; ‘আমার বিশ্বাস সাগর আরও ভালো করবে, তার নাম দেশ-বিদেশে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়বে।’
মরুল খেলতে নামলে টিভি সেটের সামনে সহজে আসতে চান না জাকির। কারণ তিনি শঙ্কায় থাকেন, ‘৩০ রান না হওয়া পযর্ন্ত আমি টিভি সেটের সামনে যাই না। মনে মনে অনেক ভয় লাগে, আমাদের ছেলে যদি আউট হয়ে যায়! ৩০ রান পেরোলে সাহস পাই।’

জাকির ছাড়াও সাগরের আরও তিন চাচা আছেন। নুরুন নবী, কামরুজ্জামান রণক এবং হুমায়ুন কবির চাচারা নয়নের মনি করে রেখেছেন ইমরুলকে।

চাচাদের নয়নের মনি সাগরের জন্ম ১৯৮৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি; বানী আমিন বিশ্বাস ও দিলারা পারভিনের ঘর আলোকিত করে। ২০০৮ সালে জাতীয় দলে ঠাঁই পাওয়ার পর ইমরুল এখন আলোকিত করছেন পুরো বাংলাদেশকেও।

সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
Previous
Next Post »
Thanks for your comment