BDNow24 News

আলোর রেখা দেখছেন সোহাগ-আল আমিন

যেন অদ্ভূত এক অন্ধকার সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়েছিলেন সোহাগ ও আল আমিন। পথ হাতড়ে বেরাচ্ছিলেন আলোয় ফেরার। সেখান থেকে বের হতে পারেননি এখনও। তবে সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় আলোর রেখা যেন দেখতে পেয়েছেন দুজনই। ২৭ জনের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা দুই বোলার।
দুজনের গল্পটা প্রায় একইরকম। আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রেখেই আলো ছড়িয়েছেন দুজন। পেয়েছেন খ্যাতি আর জনপ্রিয়তা। বেশ দ্রুতই আবার দেখেছেন উল্টো ছবি। বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল দুজনেরই।
আল আমিন সেই প্রশ্ন পেছনে ফেলে গত নভেম্বরে খেলেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। বিশ্বকাপ দলেও ছিলেন। কিন্তু শৃঙ্খলাজনিত কারণে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর পর আর ফিরতে পারেননি দলে। সবশেষ ছিলেন পনি (প্লেয়ার্স অব ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট) ক্রিকেটারদের তালিকায়।
বৃহস্পতিবার সেই পনির হয়েই অনুশীলন করছিলেন মিরপুরের একাডেমি মাঠে। তার ফাঁকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন স্বস্তির কথা।
“অনেক ভালো লাগছে, খুবই স্বস্তি পাচ্ছি। পনিতে থাকলেও আসলে বুঝতে পারছিলাম না সামনে কি হবে। ক্যাম্পে ডাক পাওয়ায় অন্তত এই ভরসা পাচ্ছি যে, নির্বাচকদের পরিকল্পনায় আমি আছি। ফিটনেস নিয়ে আরও কাজ করা যাবে, নিজেকে প্রমাণের সুযোগ অন্তত পাচ্ছি। এটাই অনেক বড়।”
বোলিং অ্যাকশন শুধরে ক্রিকেটে ফেরা সোহাগ ছিলেন না কোথাও। না জাতীয় দল, না হাই পারফরম্যান্স ইউনিট, না পনি। নিজের তাগিদেই পনি ক্রিকেটারদের নেটে বোলিং করছিলেন নেট বোলার হিসেবে। কদিন আগে এক ভুল বোঝাবুঝিতে বাদ দিয়েছেন সেটিও। টালমাটাল এই সোহাগকেও পায়ের নিচে একটু শক্ত জমিনের আশ্বাস দিচ্ছে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের দলে ডাক।
“খুব হতাশ লাগছিল। কিছুদিন আগেও জাতীয় দলে খেলেছি। সেখান থেকে একদমই কোথাও নেই, এই অনুভূতিটা আসলে বলে বোঝানোর মতো নয়। ক্যাম্পে ডাক পাওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। কিছুটা হলেও যে বিবেচনায় আছি, এতে নিজের ওপর বিশ্বাসটা ফিরে পাচ্ছি।”
২০১৪ সালে বাংলাদেশ দলের দুঃস্বপ্নের সময়ে সবচেয়ে আলোকবর্তিকা হয়ে ছিলেন আল আমিনই। সাদা বা রঙিন পোশাক, দলের টানা বাজে পারফরম্যান্সের মধ্যে তিনি আলো ছড়িয়ে গেছেন নিয়মিত। বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই হঠাৎ ছন্দপতন। আর ফিরতে পারেননি ছন্দে। বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর পর প্রশ্নবিদ্ধ ছিল তার আচরণও। তাকে টানা দলের বাইরে রাখার ব্যখ্যাও ছিল বিভ্রান্তিকর।
তবে সব পেছনে ফেলে এখন সামনে তাকিয়ে আল আমিন, “খুব দ্রুত ভালো-খারাপ দুই সময়ই দেখেছি আমি। শিখেছিও অনেক। এটাও বুঝি, এক বছর আগের দলের যে অবস্থা ছিল, এখন তা নেই। প্রতিযোগিতাও অনেক বেড়েছে। যোগ্যতা প্রমাণ করেই ফিরতে হবে। আমার লক্ষ্য এখন সেটিই।”
সোহাগ অবশ্য অ্যাকশন শুধরে ফেরার পর একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে। এরপরই আবার বাইরে। এইচপি বা পনি; কোথাও না থাকা আরও হতাশ করেছিল তাকে। প্রশ্ন উঠেছিল ফিটনেস নিয়ে। কন্ডিশনিং ক্যাম্পে সোহাগও ফিটনেস ভালো করতে চান।
“একটি টি-টোয়েন্টি দেখে তো আর ফিটনেস পুরো বোঝা যায় না। তার পরও যখন ফিটনেস ভালো করার কথা বলা হয়েছে, সেটিই করতে চাই। আসলে বেশ কিছু দিন দলের বাইরে থাকলে ফিটনেসে এমনিই খানিকটা ঘাটতি থাকে। এখন সুযোগ যখন পাচ্ছি, ফিটনেস ভালো করতে চাই।”
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের টেস্ট দল ছাড়াও অক্টোবরে জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের বাংলাদেশ ‘এ’ দল নির্বাচন করা হবে মূলত এই ক্যাম্পের ক্রিকেটারদের নিয়েই। এই দুই দলের একটিতে জায়গা পাওয়াই লক্ষ্য আল আমিনের।
“প্রথম লক্ষ্য তো অবশ্যই জাতীয় দল। না হলে অন্তত ‘এ’ দল। ‘এ’ দলে ভালো করলেও জাতীয় দলে ফেরা সম্ভব। চেষ্টা করব ভালো পারফরম্যান্স করার।”
সোহাগ অবশ্য পাখির চোখ করছেন জাতীয় দলকেই, “জাতীয় দলে ফেরাই একমাত্র লক্ষ্য। ‘এ’ দলে সুযোগ পেলেও অবশ্যই ভালো করার চেষ্টা করব। তবে আমি জাতীয় দলেই ফিরতে চাই আবার।”
দুটির কোনোটিতেই সুযোগ না পেলেও হাল ছাড়বেন না সোহাগ।
“একটিতেও সুযোগ না পেলেও ক্ষতি নেই। সামনে জাতীয় লিগসহ অনেক খেলা আছে। কন্ডিশনিং ক্যাম্পে থেকে ফিটনেসটা ভালো করতে পারলে নিজেরই উপকার। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাহলে ভালো করতে পারব। আর ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করতে পারলে সুযোগ নিশ্চয়ই আসবে জাতীয় দলে।”
Previous
Next Post »
Thanks for your comment