BDNow24 News

প্রেমে ব্যর্থ শিক্ষক, কৌশলে এসএসসিতে ছাত্রীকে ফেল!

নড়াইলে ছাত্রীকে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য করে বিফল প্রেমের প্রতিশোধ নিলেন এক শিক্ষক! প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা এবং উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ফারিয়া ইসলামকে কৌশলে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করানো হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষায়ও কম নম্বর দেয়া হয়েছে বলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ফসিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায়তিনসদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফারিয়া ইসলাম এ বছর নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। মেধাবী ফারিয়া সাতটি বিষয়ে এপ্লাস পেলেও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি ব্যবহারিক পরীক্ষায়ও ওই স্কুলের সব পরীক্ষার্থীকে ২৫ নম্বর করে দেওয়া হলেও ফারিয়াকে দেওয়া হয়েছে ১৫ নম্বর করে।
ফারিয়ার পরীক্ষাকেন্দ্র নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ফসিয়ার রহমান তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। তবে ফারিয়া সেই প্রস্তাব প্রত্যাখানসহ তাকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ওই শিক্ষক ফারিয়াকে ব্যবহারিকে কম নম্বর দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে ফারিয়ার পরিবার।
এ ছাড়া পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে জমাকৃত খাতা ও বহুনির্বাচনির উত্তরপত্র পরিবর্তন করে বিকৃত করে জমা দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এ কারণে ফারিয়া পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ফারিয়াসহ তার পরিবার।
এক শিক্ষকের কুদৃষ্টির কারণে ফারিয়ার সব আনন্দ আজ ধুলোয় মিশে গেল। সব বিষয়ে ভালো পরীক্ষা দেয়ার পরও ফারিয়াকে ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর দিয়ে ফিজিক্সে ফেল করানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবার পর ওই পরিবারের আনন্দ একেবারে ম্লান হয়ে গেছে।  পরিবারের সবার সময় কেটেছে চরম হতাশায়।  মেয়ের হতাশ চেহারায় উৎকণ্ঠিত বাবা স্কুলের প্রধান শিক্ষক, জেলা প্রশাসক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রতিকারের আশায়।
ফারিয়া ইসলাম নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর বিজ্ঞানে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।  তার রোল নং ১১২৪২৮ এবং রেজিঃ নং ১২৯৩৬৫৪৪৮০।
নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামের জহুরুল ইসলামের মেয়ে ফারিয়া ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল।  ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্তপ্রত্যেক শ্রেণিতে কখনো প্রথম আবার কখনো ২য় স্থান লাভ করতো।  স্কুলের এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায় যে ৩ জন ছাত্রী গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে ফারিয়া তাদের একজন।
ফারিয়ার পরিবারের অভিযোগ, ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিক্ষক ফসিয়ার রহমান তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন।  এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফারিয়ার পরিবার শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিচালক এবং বোর্ড কন্ট্রোলারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সে বছর তাকে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।  এর কিছুদিন পর তিনি আবার নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন ।
সূত্রে জানা গেছে, প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় স্কুল থেকে পূর্ণ ২৫ মার্ক করে দেয়া সত্বেও কম্পিউটার শিটে ফারিয়াকে ১৫ করে মার্ক দেখানো হয়েছে।  ফারিয়ার পদার্থ বিজ্ঞান খাতায় কারচুপি করা হতে পারে।  তা না হলে এত ভালো একজন ছাত্রীর এরকম ফলাফল হতে পারে না।  বিষয়টি সঠিক তদন্ত করা দরকার।
নড়াইল জেলা প্রশাসক আ. গাফফার খান গণমাধ্যমকে জানান, মেয়েটির
পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।  বিষয়টি নড়াইল সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে।  প্রকৃত মার্ক এবং যে মার্ক পাঠানো হয়েছে তা যাচাই করে দেখা হবে।  মেধাবী মেয়েটি যাতে বিনা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে বলেছি।
ফারিয়ার এক সহপাঠি জানায়, স্কুলের একজন কৃতী শিক্ষার্থীর ফলাফল একজন শিক্ষকের ঘৃণ্য মনোভাবের কারণে এমনটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ফারিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক, শিক্ষা বোর্ড, প্রেসক্লাবসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে লিখিত আকারে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
Previous
Next Post »
Thanks for your comment