পিছনে ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা। সামনে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার সম্মোহন। মাঠে প্রতিপক্ষের প্রতি আম্পায়ারদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব। গ্যালারি ভর্তি প্রতিকুল ধ্বনি। কান পাতলেই শোনা যায় প্রতিপক্ষের নাম ধরে আকাশ ফাটানো চিৎকার। ১৯ মার্চ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে কিছুই পক্ষে ছিলো না রুবেল হোসেনের। তারপরও সেদিন একটি ছবি, একটি মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন তিনি। যা কখনোই ভুলবে না ক্রিকেট বিশ্ব।
বাংলাদেশ- ভারতের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে এতো উত্তেজনা কোনো দিন ছড়ায়নি। প্রতিবেশীদের সাথে বাংলাদেশের মাঠে নামা মানেই হার। মাঝে মাঝে একটু আধটু ভালো খেলা। এর মধ্যেই তিন তিনবার ধরা দিয়েছে বিজয়। প্রথমবার ২০০৪ সালে। সে স্মৃতি কখনো আড়ালে পড়বে না। ভারতকে প্রথম হারানোর স্মৃতি ভোলা যায় না।
এরপর ২০০৭ বিশ্বকাপে। পোর্ট অব স্পেনে আরো একবার ভারতকে পদানত করেন মাশরাফিরা। ওই হারে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যায় ভারত। ওই হার এখনো দগদগে ঘা হয়ে আছে শচিন টেন্ডুলকার, সেহওয়াগ ও সৌরভদের মনে। আরো একবার বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতকে পাওয়ার আগে ২০১২ সালে এশিয়া কাপে তাদেরকে হারানো গেছে। শচিনের শততম সেঞ্চুরির দিনটি বিবর্ণ হয়ে আছে যে হারে।
তিনটি সুখস্মৃতির পর এলো ২০১৫-এর ১৯ মার্চ। বিশ্বকাপের নকআউট মঞ্চ। যে মঞ্চ আগে কখনো দেখা হয়নি সাকিব-তামিমদের। যে উপলক্ষ্যের উত্তাপ আগে কখনো গায়ে মাখা হয়নি মাশরাফির। এমনই উত্তপ্ত ময়দানে, এমনই বড় উপলক্ষ্যে মাশরাফিদের সামনে ছিলো হিমালয়ের চেয়ে বেশি ভারের চাপ। সেই চাপ সামাল দিয়ে ভালোই খেলছিলেন তারা। কিন্তু আম্পায়াররা বাঁধ সাধলেন। ভারতের আগে ব্যাটিংয়ের সময় দুটি সিদ্ধান্ত চলে গেলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। ম্যাচ থেকে তখনই ছিটকে গেলেন মাশরাফিরা।
ঘটনা ওই বিপদের আগেই ঘটান রুবেল। যুব দলে থাকতেই তার বিরোধ বিরাট কোহলির সাথে। দুই দুইবার কোহলির কাছে হেরে গেছেন রুবেল। এবার কী হবে। সবাই যখন এই ভাবনায় ডুবে আছেন। সবাই যখন ভারতকে আরো একবার হারনোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে সেমিফাইনালের রোমাঞ্চে রীতিমত উত্তেজিত। ঠিক তখন রুবেলের কাছেও আকাশসমান চাওয়া। ঠিক যেভাবে ইংল্যান্ডকে ডেথ ওভারের আগুনে গোলায় বিদায় করে দিয়েছেন। ঠিক সেভাবে ভারতকে ভড়কে দেওয়ার দাবি তার কাছে। এমনই মুহূর্তে কোহলিকে আটকে দিলেন তিনি। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাটসম্যান থমকে গেলেন মাত্র তিন রান করে। রুবলের বলে মুশফিকের ক্যাচ দিয়ে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়লেন কোহলি। তার পিছনে পিছনে হাঁটা শুরু করলেন রুবেল। হয়তো বলতে চাইলেন, ‘দেখো, পারি কিনা!’
রুবেলকে থামালেন রিয়াদ। ছুটে এলেন মাশরাফি। শান্ত করলেন নাসির। ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরে গেছে। কিভাবে হেরেছে, সারা বিশ্ব তা জানে। কিন্তু রুবেল হারেননি। কোহলির সামনে জিতেছেন তিনি। কোহলিকে আউট করে তার যে উল্লাস, দুর্দান্ত পেস-সুইং ও বাউন্সে ভারতীয়দের ভড়কে দেওয়ার সেই বোলিং বিশ্ব কখনো ভুলবে না।
ConversionConversion EmoticonEmoticon