অবিশ্বাস্য শোনালেও ঘটনাটি সত্যি। মাত্র এক টাকায় পেটভরে খাওয়া সম্ভব। সেটা হতে পারে দুপুরের কিংবা রাতের খাবার। চাইলে ওই এক টাকাতেই সকালের নাশতাও সেরে নেওয়া যায়।
তবে হ্যাঁ, এই সুবিধা কিন্তু সবার জন্য নয়। এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন তাঁরাই, যাঁদের নিকটাত্মীয় ভর্তি রয়েছেন সরকারি হাসপাতালে।
আট বছর ধরে অদ্ভুত এই পরিষেবা দিয়ে চলেছেন ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের এরোদ জেলার বাসিন্দা ভেঙ্কটরমন। নিজের মেসবাড়িতে বসে এই পরিষেবা দেন তিনি। তাঁর মেসবাড়ির নাম ‘এ এম ভি হোমলি মেস’। যে মেসে বসে সুলভে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীর নিকটাত্মীয়দের খাবার সরবরাহ করেন তিনি।
ভেঙ্কটরমন জানান, ২০০৭ সালের ছোট্ট একটি ঘটনাই তাঁর এ উদ্যোগের প্রধান কারণ। ২০০৭ সালে তাঁর মেসবাড়িতে খাবার কিনতে আসেন এক নারী। মাত্র ১০ টাকা দিয়ে তিনটে ধোসা (দক্ষিণী খাবার) কেনেন তিনি। তার পর ভেঙ্কটরমনের হাতে টাকা দেওয়ার সময় ওই নারী বলেন, বাকিতে যদি আর কিছু খাবার দেন, তাহলে তিনি নিজে খেতে পারবেন। কারণ, ওই তিনটি ধোসা তাঁর অসুস্থ স্বামীকে দিলে ওই নারীর নিজের খাওয়ার মতো আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।
এ কথা শুনে অন্তর কেঁদে ওঠে ভেঙ্কটরমনের। তিনি ওই নারীকে ১০ টাকাতেই ছয়টি ধোসা দিয়ে দেন। সেদিন থেকেই ভেঙ্কটরমন ঠিক করেন, সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের স্বল্পমূল্যে খাবার দেবেন তিনি। সেই থেকে যাত্রা শুরু। তার পর মাত্র এক টাকার বিনিময়ে হাসপাতালে আসা রোগীর নিকটাত্মীয়দের খাবার দেওয়া শুরু করেন তিনি।
ভেঙ্কটরমন জানান, সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের অধিকাংশই অত্যন্ত গরিব, যাঁরা দুবেলা সামান্য পাউরুটিও জোগাড় করতে পারেন না। অনেক সময় দেখা যায়, মা কিংবা বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাই এখানে দিন কাটায়। তাদের দেখে ভীষণ কষ্ট হয়। তাই সাধ্যে যেটুকু কুলায়, তিনি সে মতো চেষ্টা করেন ওই সব মানুষের ক্ষুধাকে অল্প পয়সায় মেটাতে।
হাসপাতালের কার্ড দেখে সেসব দুস্থ রোগীর আত্মীয়দের মাত্র এক টাকার বিনিময়ে খাবার সরবরাহ করেন ভেঙ্কটরমন। তবে এই এক টাকা না নিলেও ভেঙ্কটরমনের যে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে, তেমনটা নয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ন্যূনতম এই টাকা এ জন্য নিই যেন, ক্রেতারা খাবারটা নষ্ট না করেন।
আট বছর ধরে ভেঙ্কটরমন আর তাঁর স্ত্রী দুজনে মিলে অদ্ভুত এই পরিষেবা দিয়ে চলেছেন দুস্থ রোগীর আত্মীয়দের জন্য।
ভেঙ্কটরমন দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন আর ছোটটি প্রকৌশলবিদ্যা নিয়ে পড়ছে।
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এভাবেই জনসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন সকালে ভেঙ্কটরমন ও তাঁর স্ত্রী সরকারি হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে গরিব রোগীদের নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে নাম সংগ্রহ করেন। তার পর তাঁদের কাছ থেকে মাত্র এক টাকা সংগ্রহ করে দিয়ে আসেন টোকেন। অনেকে অবশ্য খাবার নেওয়ার সময়ও টাকা হাতে দিয়ে যান।
সকালে এক টাকার বিনিময়ে দেন তিনটে ধোসা, দুটো ইডলি। দুপুরে এক টাকাতে দেন পাঁচ পদের খাবার। রাতে এক টাকার বিনিময়ে থাকে চাপাটি আর ধোসা। এই দামে রোজ সকালে ১০ জনকে নাশতা দেন ভেঙ্কটরমন। দুপুরে আর রাতে গড়ে খান ৪০ জন করে। তবে শর্ত একটাই, খাবার নিয়ে যেতে হয় প্যাকেটে করে। বসে খাওয়ার কোনো বন্দোবস্ত ভেঙ্কটরমনের মেসে নেই।
কোনোভাবেই এই পরিষেবা বন্ধ করতে রাজি নন ভেঙ্কটরমন দম্পতি। তবে ভেঙ্কটরমন জানালেন, ভবিষ্যতে এই এক টাকাতেই আরো বেশি মানুষকে খাবার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
ConversionConversion EmoticonEmoticon